চকরিয়া উপজেলার বদরখালী’র চিংড়ি সন্ত্রাসী নামে কুখ্যাত প্রভাবশালী ব্যক্তি হারুনুর রশিদ মিন্টু’র নিয়ন্ত্রনাধীন মিন্টু বাহিনীর অত্যচারে চিংড়ি চাষীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। মিন্টু বাহিনীসহ একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার চিংড়ি জোন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মিন্টু তার বাহিনী নিয়ে প্রতিদিন কোন না কোন চিংড়ি ঘেরে হানা দিচ্ছে। অস্ত্রের মুখে চিংড়ি ঘেরে লুটপাট করে চিংড়ি চাষীদের সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ তাকে গ্র্রেফতার করছে না। এতে চকরিয়া পেকুয়ার চিংড়ি চাষীরা সন্ত্রাসীদের কাছে জিন্মি হয়ে পড়েছে।
পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ইয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক আজমগীর চৌধুরী জানান; পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ার বিছাখালীতে তার একটি ১০একর বিশিষ্ট চিংড়ি ঘের রয়েছে। ওই চিংড়ি ঘেরটিতে তিনি নিজেই চিংড়ি চাষ করেন। গত কয়েক বছর ধরে তার চিংড়ি ঘেরে চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর ২নং ব্লকের ইউছুপ আলীর পুত্র মোঃ হারুনুর রশিদ মিন্টু (৪০) বিভিন্ন সময় হানা দিয়ে চিংড়ি মাছ লুট করে নিয়ে যায়। পরে ওই চিংড়ি ঘেরটি মিন্টুর পরিচালনায় দিতে বাধ্য করা হয়। মিন্টু তার বাহিনী দিয়ে ওই চিংড়ি প্রকল্পটি পরিচালনায় দায়ীত্ব নিয়েও শিক্ষক আজমগীর চৌধুরীকে কোন টাকা না দিচ্ছে না। এ বছর আজমগীর চৌধুরী তার নামে লীজ প্রাপ্ত এ চিংড়ি ঘেরটি নিজে চাষ করলেও মৌসুমের শুরুতেই মিন্টু তার ঘের থেকে অস্ত্রের মূখে মাছ লুট করে নিয়ে যায়। আজমগীর চৌধুরীর পাশের চিংড়ি চাষী পেকুয়া সদরের জিয়াবুল করিম জানান; তিনি তার বড় ভাইয়ের একটি চিংড়ি প্রকল্প পরিচলনা করেন। তার কাছ থেকে চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর মিন্টু বাহিনীর প্রধান মিন্টু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে ওই চিংড়ি ঘেরেও লুটপাট করে। এমন কি নিয়মিত চাঁদা না দিলে সেখানে চিংড়ি চাষ করা যাবে না বলেও হুমকি দেয়। এ মৌসুমের শুরুতে তার ঘেরে তিনবার উঠেছে সন্ত্রাসীরা। ওই এলাকার চিংড়ি চাষীরা জানান, মিন্টু তাদের চিংড়ি জমিগুলো দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আগামী মৌসুমের জন্য লবণ মাঠের কথা বলে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিচ্ছে।
একই এলাকার চিংড়ি চাষী আমিন জানান; এখানে মিন্টু যা বলেন তা করতে হয়। না করলে চিংড়ি চাষ করা যাবে না। তাকে চাঁদা না দিয়ে আমরা চিংড়ি ঘেরে যেতে পারি না। আমিন জানান, মিন্টু বাহিনী পেকুয়ার চিংড়ি ঘেরে লুটপাট ও চাঁদাবজি করে শুধ্ ুতাই নয়, তার বাহিনী চকরিয়া সীমানায় মহেশখালী এলাকায় গিয়ে একই ভাবে চিংড়ি ঘেরে লুটপাট চালায়। মিন্টুর বাড়ী চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে। বদরখালী ইউনিয়নের পাশে লাগোয়া পেকুয়া, মহেশখালী’র চিংড়ি ঘেরগুলো। এতে মিন্টু বাহিনীর লোকজন শুধু নদী পার হলেই ওই দুই উপজেলার চিংড়ি ঘেরে উঠে যাওয়া যায়। তার বাহিনীর কাছে এখানকার চিংড়ি চাষীরা জিন্মি হয়ে পড়েছে। যারা চাঁদা দেয় না তাদের চিংড়ি ঘেরগুলো সে জবর দখলও করে নেয়। চিংড়ি চাষীরা জানান, বদরখালীর সন্ত্রাসী মিন্টুর সাথে স্থানীয় পুলিশ ফাড়ির কিছু পুলিশের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যে মিন্টু চিংড়ি ঘের গুলোতে দাপিয়ে বেড়ালেও তাকে ধরা হচ্ছে না।
চকরিয়া উপজেলার চিংড়ি জোন এলাকায় কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। ওই চিংড়ি ঘেরেও লুটপাটের ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। সন্ত্রাসীরা চিংড়িসহ মাছ ও খামার বাড়ি লুটপাট করে নিয়ে যায়। চকরিয়া উপজেলার রামপুরের চিংড়ি ঘের মালিক আবুল কালামের ঘের পাহাদার আব্দু রহিম জানান; বদরখালীর কিছু সন্ত্রাসী রামপুরের ৪টি চিংড়ি ঘের মালিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবী করে। ঘের মালিকেরা ওই দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় শামশুল হক, আবুল কালাম আজাদ, মোস্তফা কামাল ও নুর নাহার বেগমের চিংড়ি ঘেরে হানা দেয়। তারা প্রায় ১৫ রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ পূর্বক ভীতি সঞ্চার করে। চিংড়ি ঘেরগুলোর পাহারাদারদের তাড়িয়ে দিয়ে তারা খামার বাড়ি ভাংচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন বলেছেন, তার ইউনিয়নের চিংড়ি জোন এলাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে যে অস্ত্র আছে তা পুলিশের কাছেও আছে কিনা সন্দেহ। এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে এখানকার চিংড়ি চাষীরা কোন দিন নিরাপদে চিংড়ি করতে পারবে না। তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মূখে তার মালিকনাধীন একটি চিংড়ি ঘেরও দখল করে লুটপাট করেছে। সন্ত্রাসী মিন্টুর ব্যাপারে চকরিয়া থানার এস আই আলমগীর জানান, বদরখালীর হারুনুর রশিদ মিন্টুর বিরুদ্ধে পেকুয়ার শিক্ষক আজমগীর চৌধুরীর একটি অভিযোগসহ দুইটি অভিযোগ আমার হাতে ছিল। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আমি মিন্টুকে নোটিশ দেয়ার পরও তিনি হাজির হননি। এ ব্যাপারে বদরখালীর হারুনুর রশিদ মিন্টু উল্টো প্রশ্ন করে বলেন; আমাকে থানা থেকে নোটিশ দেয়ার পরও হাজির না হলে পুলিশ ধরছে না কেন ? চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আযম বলেছেন, মিন্টু’র বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। তাকে পাওয়া গেলে গ্রেফতার করা হবে। চকরিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান বলেছেন, চিংড়ি জোন এলাকা রামপুরে আমাদের একটি পুলিশ ফাড়ি থাকলেও যানবাহন, নৌকা ও জনবলের অভাবে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। সেখানে আরও কী কী করা দরকার আমরা তা কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
পাঠকের মতামত: